বালুচিস্তানে সেনা-বিদ্রোহী সংঘর্ষের অবসান, ৩৪৬ জন উদ্ধার, বহু নিহত

0

 বালুচিস্তানে সেনা-বিদ্রোহী সংঘর্ষের অবসান, ৩৪৬ জন উদ্ধার, বহু নিহত

বালুচিস্তানে দিনব্যাপী সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষের অবসান হয়েছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমদ শরিফ জানিয়েছেন, এই সংঘর্ষে ৩৩ জন বালোচ বিদ্রোহী নিহত হয়েছে। এছাড়াও, সেনাবাহিনীর চলমান অভিযানে ৩৪৬ জন বন্দীকে উদ্ধার করা হয়েছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানান, সংঘর্ষে ৩০ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছেন। এদিকে, এই ঘটনায় ২১ জন নিরীহ যাত্রী এবং আধাসামরিক বাহিনীর ৪ জন সদস্যও প্রাণ হারিয়েছেন।


এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় ট্রেন অপহরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। নয় কামরার জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি কোয়েটা থেকে পেশোয়ারের পথে যাচ্ছিল। ট্রেনে প্রায় ৪০০ জন যাত্রী ছিলেন। কোয়েটা থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে গুডালার এবং পিরু কুড়ির পাহাড়ি এলাকায় সন্ত্রাসীরা একটি সুড়ঙ্গের কাছে বিস্ফোরক ব্যবহার করে ট্রেনটিকে লাইনচ্যুত করে এবং অপহরণ করে। এই ঘটনার পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দ্রুত অপারেশন শুরু করে এবং বিদ্রোহীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।


লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমদ শরিফ পাকিস্তানি টিভি চ্যানেল দুনিয়া নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, "সেনাবাহিনী দ্রুত এবং কার্যকরভাবে অপারেশন চালিয়ে বিদ্রোহীদের পরাজিত করেছে। আমরা ৩৩ জন বিদ্রোহীকে নিহত করেছি এবং ৩৪৬ জন বন্দীকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।" তিনি আরও জানান, সেনাবাহিনী এখনও এলাকাটি নিরাপদ করতে অনুসন্ধান অভিযান চালাচ্ছে।


এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অনেকেই তাদের আত্মীয়স্বজনদের খোঁজে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ট্রেন অপহরণের পর বিদ্রোহীরা যাত্রীদের জিম্মি করে পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যায়। সেনাবাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপের কারণে অনেক যাত্রীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে, এই ঘটনায় বেশ কিছু নিরীহ যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।


বালুচিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিদ্রোহ এবং সন্ত্রাসবাদের কারণে এই অঞ্চলটি অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। বালোচ জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলো পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে স্বায়ত্তশাসন এবং সম্পদ বণ্টনের দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। এই সংঘর্ষে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বেশ কিছু সদস্যও নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।


এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো নিরীহ নাগরিকদের জীবন রক্ষায় আরও সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে। পাকিস্তান সরকার এই ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।


এই ঘটনা বালুচিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা সরকারের কাছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা অঞ্চলটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।


এই সংঘর্ষের পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত রয়েছে। সেনাবাহিনীর অনুসন্ধান অভিযান অব্যাহত থাকলেও, স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন যে ভবিষ্যতে আরও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। বালুচিস্তানের জটিল রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা সতর্কতা জারি করেছেন এবং সংঘাত নিরসনে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে পাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

Tags

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)
Today | 1, April 2025